তাকওয়াবানদের গল্প

আমার ম্যাডামের একজন ছাত্রী বোন ছিলেন।সেই বোনটি ছিলেন অত্ত্বাধিক তাকওয়ান।নামাজে দাড়ালে মানুষের সামনে হোক বা একাকিত্বে নিজেকে কোনভাবেই কন্ট্রোল করতে পারতেন না।

নামাজের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর ভয়ে এত পরিমানে কান্না করতেন যে, মুক্তার হার ছিড়ে গেলে যেমন মাটিতে পুতি গড়িয়ে পড়ে তেমনভাবে তার চোখের পানি গড়িয়ে গড়িয়ে পড়তো।

যখনি কুরআনের ক্লাসে হুজুর জাহান্নামের আয়াতগুলো পড়াতো তখনো তিনি প্রচন্ড রকমের ভয় পেত।

সব সময় এত বেশি পরকাল নিয়ে ফিকির করতো, না ঠিক মত খাবার খেত!না ঠিক মত ঘুমাতে পারতো! এজন্য তিনি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চিকন ছিল।

দাওরাহের বছরে তিনি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তার প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে চলে যান।

চলুন আমাদের আল্লাহ ভীতির সাথে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের আল্লাহভীতি একটু মিলিয়ে দেখি!!

আমাদের এলাকাতে প্রসিদ্ধ একটি কওমি মাদ্রাসা আছে।যেখানে প্রায়ই ছয় হাজার ছেলে-মেয়ে অধ্যায়ণরত আছেন।কিছু কম বেশ থাকতে পারে।

“সেই মাদ্রাসায় মিজানে পড়ুয়া একজন ছোট্ট ছাত্রী বোন ছিলেন।যার তাকওয়া ছিল আকাশচুম্বী।

—সব সময় তার জিহ্বা কিছু না কিছু পাঠে রত থাকতো।তার ছাত্রী বোন রা যখন তাকে ডেকে দুনিয়াবি বিষয়ে কোন গল্পে আসর জমাতো! তাদের সাথে সাই তো দিতই না বরং ঠান্ডা মাথায় বলতো এসব মানুষকে নিয়ে সমালোচনা, দুনিয়াবি কথা বলে কি লাভ বলো!

চলো আল্লাহ তা’য়ালার তাসবিহ পাঠ করি।এটা বলে খুব সুন্দরভাবে দুনিয়াবি মজলিস থেকে পাশ কাটিয়ে চলে আসতো।

তার আমল ছিল এতই উচ্চ মানের। আলেমা আপারা তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করতেন তুমি কি এমন আমল করো।যদি আমাদের একটু বলতে আমরা খুবই উপকৃত হতাম অথচ সে ক্লাস 6এর একটি ছোট্ট মেয়ে। উত্তরে বোনটি বলেছিলেন :-আমার মায়ের শিক্ষা দেওয়া দরুদ শরীফ।বোনটি প্রচুর পরিমানে দরুদ শরীফ পাঠ করতেন।

এমনকি মাদ্রাসাতে কারো জ্বিনের সমস্যা হলে তার ক্লাসের আপারা মিলে বোনটির কাছেই নিয়ে আসতেন।সেই ঝাড়-ফুক করিয়ে জ্বিন বিদায় করতেন।সয়তান জিনেরা ও ছোট্ট বোনটিকে খুব পরিমানে ভয় পেত।

এক দিন রাতের কথা। বোনটি সপ্নে দেখেছেন পুরা রুম আলোকিত হয়ে আছে কারো নুরে।প্রথমে একটু চমকে গেলে ও পরে তাকিয়ে দেখেন স্বয়ং রাসুল সাঃ তার সামনে দাড়িয়ে আছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম  তাকে ডেকে ডেকে বলতেছেন এ প্রিয় উম্মাতি আমি তোমার আমলে সন্তুষ্ট হয়েছি।তার পরে কি বলেছে বোনটি আর বলিনি।এতটুকুই তার নিকটের ছাত্রী বোনের সাথে সেয়ার করেছিল।

তবে তার জিবনে ছিল অনেক কষ্ট। তার বাবা একজন  আমলি আলেম ছিলেন।মা ও যথেষ্ট পরিমানে দ্বিনদ্বার মহিলা।তবে তাদের ছোট অবস্থাতেই বাবা মারা যান।সংসারে আসে খুবি অভাব।দাদা-দাদি ও ছিল অসুস্থ।সংসারে মা ছাড়া কাজ করার মত ও কেউ ছিল না। তবে তিনি কঠোর পর্দা করেন।তার মা অভাবের তাড়নায় পর্দা করেই মানুষের বাড়িতে কাজ করে যা পেত তাই দিয়েই  সংসার চলতো।বোনটি সব দিক থেকেই কষ্টে দিনাতিপাত করতেন তবে জিবনের সকল সমস্যা প্রভুর সাথে যে মিষ্টি সম্পর্ক ছিল তাতে ফাটল ধরাতে পারিনি।

 আমরা যারা নি’য়ামতের সাগরে ডুবে থেকে ও ঠিক মত ইবাদত করতে পারি না।কোন নি’য়ামতটা তিনি কম দিয়েছেন সেদিকে তাকিয়ে রাত-দিন চলে তার না শুকরিয়া তাদের আল্লাহ ভীতির সাথে বোনটির আল্লাহ ভীতি একটু মিলিয়ে দেখি!

পরিশেষে একটি কথা বলতে চাই –
আল্লাহ তা’আলা আমাদের যেন সদা সর্বদা ইসলামের পথে থাকার তৌফিক দান করেন । আমিন লেখাটি সংগৃহীত এবং আমার দ্বারা কিঞ্চিৎ পরিমার্জিত

একটু ভাবুন তো ?? আল্লাহ তা’আলা আমাদের কিভাবে সৃষ্টি করেছেন !! আল্লাহু আকবার

“হে আমার বান্দারা, কোন জিনিস তোমাকে তোমার মহান প্রতিপালক সমন্ধে তোমায় ধোঁকায় ফেলে দিলো? তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর সুগঠিত করেছেন,(করেছেন প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও গুণাবলিতে সমৃদ্ধ) ও তোমাকে সুসামঞ্জস্যপূর্ণ করেছেন।” – [সূরা ইনফিতার: ৬; ৭]

পারবেন একটা কান বানিয়ে দেখাতে? যে কান শুনতে পায়? পারবেন এরকম একটা চোখ বানিয়ে দেখাতে যে চোখ 576 মেগাপিক্সেল ক্ষমতা সম্পন্ন জীবন্ত বায়োনিক চোখ! পারবেন এমন একটা মস্তিষ্ক বানিয়ে দেখাতে? যে মস্তিষ্কে ৮৬ বিলিয়ন নিউরন রয়েছে। যে মস্তিষ্কের সামনে সমস্ত সুপার কম্পিউটারও নস্যি! পারবেন এমন একটা নাক বানিয়ে দেখাতে? যে নাকের দুপাশে রয়েছে দুটো আলাদা আলাদা প্লেট। যার কারণে আমরা দূর্গন্ধ ও সুগন্ধ অনুভব করি।

পারবেন এমন দাঁতের পাটি সাজাতে! যেখানে রয়েছে নানা প্রকারের দাঁত! কর্তন দাঁত, ছেদন দাঁত, পেষণ দাঁত, আক্কেল দাঁত…। শুধু তাই নয়, যখন বাচ্চা ছিলাম তখনকার দাঁত ছিলো দূর্বল। নরম জিনিস খাওয়া যেতো। মায়ের দুধ খাওয়ার জন্য সেটা ছিলো উপযুক্ত। পরে সেটা ভেঙে নতুন দাঁত গজালো! আউটস্ট্যান্ডিং একটা সিস্টেম!

এরপর চুলের কথা ধরুন। ভ্রুর চুলগুলো বাড়ে না, মাথার চুল বাড়ে। কারণ ভ্রুর চুল ওভাবেই পারফেক্ট। কে দিলেন এই সামঞ্জস্য?

পারবেন এমন একটি জিহবা বানাতে? যে জিহবায় রয়েছে লক্ষ লক্ষ টেস্টবার্ড। যার কারণে আমার ঝাল, মিস্টি, টক, নোনতা স্বাদ পাই!

পারবেন এমন একটি গলা বানাতে? যেখানে শ্বাসনালি এবং খাদ্য নালির ডিপার্টমেন্ট আলাদা আলাদা ভাগ করা যাছে, খাদ্য যেনো শ্বাসনালিতে না যায় এজন্য রয়েছে ছোট্ট একটি মাংস পিন্ড!

পারবেন চামরার নিচে কোটি কোটি স্নায়ু সাজিয়ে দিতে! অথচ আপনার একটা হেডফোনের তারও পেঁচিয়ে যায়!

পারবেন এমন সুসামঞ্জস্যপূর্ণ একটি দেহ তৈরি করতে? বস্তুত আপনি একটি নখও বানাতে পারবেন না। যে নখেও রয়েছে অনুভূতি শক্তি, রয়েছে বৃষ্টিশীলতা। নতুবা নখ মরে গেলে আর গজাতো না।

ছবিটি দেখুন। অসংখ্য অসংখ্য মেকানিক সিস্টেম দেখতে পাবেন আপনি। পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল যন্ত্রের থেকে লক্ষ কোটি গুণ জটিল এই মানবদেহ। এতো চমৎকার সব মেকানিজমে যিনি আপনাকে আমাকে আমাকে বানালেন, কেনো আমরা তাঁর থেকে এতো দূরে এই অন্ধকার পাপের সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছি? কেনো আমরা তাঁর কৃতজ্ঞতায় মাথানত করছি না? কেনো তাঁর অসংখ্য নেয়ামত রাজি ভোগ করার পরও তাকে ভুলে গিয়ে পাপে পথে প্রতিযোগিতা করছি৷ কোন জিনিস আমাদের তাঁর মতো ভালোবাসার একজন মাবুদ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে?

লেখা: Md Arif Abdullah