📝 প্রথমে আমরা জানবো সিগারেট ও জর্দা দিয়ে পান খাওয়ার হুকুম কী? এরপর জানবো সিগারেট অথবা জর্দা দিয়ে পান খেয়ে নামায পড়লে এবং নামাযের মধ্যে মুখ থেকে গন্ধ আসলে ঐ নামাযের হুকুম কী? এরপর নামধারী আহলে হাদীসদের একটি অভিযোগের জবাব জানবো …
ধূমপান করা মাকরূহে তাহরিমী তথা হারাম । এতে আর্থিক অপচয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত ক্ষতিও রয়েছে । এমনকি সিগারেটের গায়েও লেখা থাকে “ধূমপান মৃত্যু ঘটায়” তাই জেনে শুনে নিজের জান-মালের ক্ষতি করা মারাত্মক গোনাহ হবে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, তোমরা নিজ হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না ।
( সূরা বাকারা, আয়াত নং ১৯৫ )
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক নেশার বস্তুই মাদক (খমার) আর প্রত্যেক নেশার জিনিসই হারাম।
( সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২০০৩ ) সিগারেট যেহেতু নেশা জাতীয় জিনিস তাই এটা যে,মাকরূহে তাহরিমী তথা হারাম হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই ধূমপান করা থেকে বিরত থাকা জরুরী ।
আধুনিক গবেষণায় এটা প্রমাণিত সিগারেটের বর্জন- কৃত ধোঁয়া অন্য মানুষের নাক দিয়ে তার ফুসফুসে প্রবেশ করে, ফলে সেই লোকটির ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সিগারেটের ধোঁয়ায় মানুষের খুব কষ্টও হয় অথচ রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আখেরাতে বিশ্বাস রাখে, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয় ।
( সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০১৮ )
অন্য আরেকটি হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ্র শপথ! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। আল্লাহ্র শপথ! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। আল্লাহ্র শপথ! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহ্র রসূল! কে সে লোক ? তিনি বললেন, যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে না । ( সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০১৬ )
ধূমপায়ীর মুখের দুর্গন্ধে অন্যের কষ্ট হয়, যা স্বতন্ত্র একটি গোনাহ। তাই ধূমপান থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। মহান আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, নিশ্চয় তারা অপবাদ ও সুস্পষ্ট পাপ বহন করে ।
( সূরা আহযাব, আয়াত নং ৫৮)
আর বিনা জর্দাতে যদি কেউ পান খায় তাহলে সেটা জায়েয হবে, পানের সাথে জর্দা বা তামাক খাওয়া যেহেতু ডাক্তারি মতে নিশ্চিত শারীরিক ক্ষতি হয় এবং এতে কোন উপকারও নেই তাই জর্দা খাওয়া নাজায়েয হবে এবং গোনাহও হবে, কিন্তু সিগারেটের মত হারাম হবে না কারণ জর্দা সিগারেটের মত মারাত্মক ক্ষতিকারক নয় । জর্দা খাওয়া অপব্যয়ের মধ্যেও শামিল,পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা নিজ হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না। ( সূরা বাকারা, আয়াত নং ১৯৫ ) অন্য আয়াতে বলেন,নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই । (সূরা বানী ইসরাঈল,আয়াত নং ২৭ )
সিগারেট জর্দা পুষ্টিকরও নয়, আবার ক্ষুধা নিবারণ মূলকও নয়, তাই এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকা বিচক্ষণতার পরিচয় । জাহান্নামীদের খাবারের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, এটা তাদের পুষ্টিও যোগাবে না ক্ষুধাও নিবারণ করবে না । (সূরা গশিয়াহ,আয়াত নং ৭)
আর দুর্গন্ধযুক্ত অবস্থায় নামাযে দাঁড়ানো নাজায়েয । হাদীসে হালকা দুর্গন্ধ কাঁচা পেঁয়াজ রসুন খেয়েও মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে ।
( সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫৪৫২ )
অতএব বিড়ি-সিগারেটের তীব্র দুর্গন্ধের সাথে মসজিদে প্রবেশ করাও নিষিদ্ধ হবে। অবশ্য এ কারণে নামায ত্যাগ করা যাবে না এবং মসজিদে গমনাগমনও বন্ধ করা যাবে না। বরং অতি দ্রুত এ বদ অভ্যাস ত্যাগ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে হবে। আর নামায আদায়ের পূর্বে এবং মসজিদে প্রবেশের আগে ভালো করে মিসওয়াক বা ব্রাশ করে দুর্গন্ধ দূর করে নিতে হবে ।
( আদ্দররুল মুখতার ৬/৪৫৯; রদ্দুল মুহতার ৫/২৯৫; )
একটি অভিযোগের জবাব
নামধারী আহলে হাদীসরা বলে থাকে যে সমস্ত হুজুররা সিগারেট খাওয়াকে “মাকরূহ” বলে ফতোয়া দেয় তাদের সিগারেট সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান নেই । সিগারেটের ক্ষতির পরিণাম সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই তাই তারা সিগারেট খাওয়াকে “মাকরূহ” বলে ফতোয়া দেয় ।
আসলে নামধারী আহলে হাদীসরা যে, ফিকাহ সম্পর্কে চরম অজ্ঞ তা তাদের এই অভিযোগের দ্বারাই প্রকাশ হয়ে গেছে । কারণ- তারা মাকরূহ দুই প্রকার এই কথা জানে না । একটা হলো মাকরূহে তানজিহী যা করলে কোন গোনাহ নেই এবং করা নিষেধও নয় বরং অপছন্দনীয়। আরেকটা হল মাকরূহে তাহরিমী যা করলে মারাত্মক গোনাহ হয় এবং করা নিষিদ্ধ তথা হারাম। আর এই সিগারেট খাওয়া হলো মাকরূহে তাহরিমী তথা হারাম। আফসোসের বিষয় হলো নামধারী আহলে হাদীসরা মাকরূহে তাহরিমীকে সাধারণ মানুষের সামনে শুধু মাকরূহ বলে ও ভুল ব্যাখ্যা করে কওমী আলেমদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করছে অথচ কওমী আলেমরাও সিগারেট খাওয়াকে মাকরূহে তাহরিমী তথা হারাম বলেন ।
••• ইসলামী বিভিন্ন প্রশ্নের দলিল ভিত্তিক উত্তর জানতে কমেন্ট করে মতামত পেশ করুন । দ্বীনী এই পোস্ট শেয়ার
করে সহীহ ইসলাম পৌঁছে দিন আপনার প্রিয় জনদের কাছে । আল্লাহ আমাদের সবাইকে উল্লেখিত সকল কথাগুলো মেনে চলার তাওফীক দান করুন ।
💐 আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন